চলতি আমন মৌসুমে ময়মনসিংহ অঞ্চলে স্থানীয় জাতসহ রোপণ করা বিভিন্ন জাতের ধানগাছে শীষ বের হতে শুরু করেছে। পরিপক্ক হয়ে ফলন উঠতে আরও মাসখানিক লাগবে। অথচ একই সময়ে চাষ করা বিনাধান-১৭ পেকে গেছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিনাধান-১৭ কাটা শুরু হয়েছে।
খরাসহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল ও অধিক ফলনশীল বিনাধান-১৭-এর বাম্পার ফলন দেখে কৃষকরা অভিভূত। মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের কোনাগাঁও কেজাইকান্দা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) থেকে ১০ কেজি বীজ নিয়ে ১৫ শতক জমিতে বিনাধান-১৭ রোপণ করেছিলেন। ১১০ দিনে পেকেছে ধান। এরই মধ্যে ঘরে তুলেছেন। বাম্পার ফলন দেখে খুশি তিনি।
একই এলাকার কৃষক আজিজুল হক বলেন, ৫২ শতক জমিতে বিনাধান-১৭ চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় আশা জাগিয়েছে। আমন ধানের স্বাভাবিক জীবনকাল ১৪৫-১৫০ দিন হলেও বিনা উদ্ভাবিত এই ধান ১১০ দিনেই পেকেছে। খরচ কম, ফলনও বেশি। যা আমাদের জন্য খুবই লাভজনক। এলাকার কৃষকদের আগামীতে এই ধান চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি।
একই এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আশ্বিন মাসে বিনাধান-১৭ ঘরে তুলতে পেরে ভালো লাগছে। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান কাটার সময়। কিন্তু একই সময়ে রোপণ করা হলেও অন্যান্য ধানের তুলনায় আগেই পেকেছে বিনাধান। এই ধানগুলোর ছড়া অন্য ধানের চেয়ে বড়, রংও ভালো। অন্যান্য ধানক্ষেত এখনও গাড় সবুজ অথচ বিনাধান-১৭ আবাদ করা হয়েছে যে জমিতে তা পেকে গেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) ফলিত গবেষণা ও সম্প্রসরাণ বিভাগের প্রধান মঞ্জুরুল আলম মন্ডল বলেন, বিনাধান-১৭ আবাদ করে প্রতিহেক্টর জমিতে ৮ টন ধান পাওয়া যায়। রোপণের ১১০ দিন পরই ধান পেকে যায়। কম সময়ে পাকায় একই জমিতে বিনাধান-১৭ আবাদ করে তিন-চারটি ফসল আবাদ করা সম্ভব।
বিনা’র মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, চীন, ইরি এবং বিনা যৌথ গবেষণা করে অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে বিনাধান-১৭ উদ্ভাবন করেছে। ধানটি রোগ বালাই সহনশীল, এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার ও অর্ধেক পানি সাশ্রয়ী এবং খরাসহিষ্ণু হওয়ায় আগাম ও অধিক ফলনশীল বিনাধান-১৭-কে ‘গ্রিন সুপার রাইস’ বলা হয়। আগামীতে ধানটি ‘মেগা ভ্যারাইটি’ হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, কম সময়ে অধিক ফলন পাওয়ায় এবং দ্রুত পাকায় আর্থিকভাবে লাভবান হবেন কৃষক। এ ছাড়া দুই ফসলি জমিতে বিনাধান-১৭ আবাদে তিন-চারবার ফসল চাষ করা সম্ভব। দেশব্যাপী এই ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।